Mens Health Magazine Online

Men's Health News Update

LightBlog

Breaking

Monday, December 25, 2017

বৃক্ক পাথুরির ঝুঁকি কমায় মিষ্টিকুমড়া

মিষ্টিকুমড়া স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সারা বছর চাষ হলেও এটি মূলত গ্রীষ্মকালীন উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশের সর্বত্রই কমবেশি চাষ করা হয়। তবে এটি আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ নয়। এর আদি নিবাস উত্তর আমেরিকা বলে ধারণা করা হয়।

মিষ্টিকুমড়ার ব্যবহৃত অংশঃ মিষ্টি কুমড়ার কোনো অংশই ফেলনা নয়। এর ব্যবহৃত অংশ হলো-পাতা, ফুল, ফল ও বীজ।

মিষ্টিকুমড়ার পুষ্ঠিগুণঃ খাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপর একটি সবজি হলো মিষ্টিকুমড়া। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা মিষ্টিকুমড়াকে বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যরূপে ঘোষণা করেছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ফ্রেশ মিষ্টিকুমড়ায় রয়েছে-(ক) কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা ৭ গ্রাম, (খ) প্রোটিন বা আমিষ ১ গ্রাম, (গ) ফ্যাট বা চর্বি .০১ গ্রাম এবং (ঘ) ডায়েটারি ফাইবার .০৫ গ্রাম।

ভিটামিনঃ ভিটামিন ‘এ’ ৭৩৮৪ আইইউ, ভিটামিন ‘সি’ ৯.০ মিগ্রা, ভিটামিন ‘ই’ ১.০৬ মিগ্রা, ভিটামিন ‘কে’ ১.১ মিগ্রা, ভিটামিন ‘বি১’ ০.০৫০ মিগ্রা, ভিটামিন ‘বি২’ ০.১১০ মিগ্রা, ভিটামিন ‘বি৬ ০.০৬১ মিগ্রা, পেনটোথেনিক এসিড ০.২৮৯ মিগ্রা, নিয়াসিন ০.৬০০ মিগ্রা, ফোলেট ১৬ মাইক্রোগ্রাম।

খনিজ উপাদানঃ সোডিয়াম ১ মিগ্রা, পটাশিয়া ৩৪০ মিগ্রা, ক্যালসিয়াম ২১ মিগ্রা, কপার ০.১২৭ মিগ্রা, আয়রন .৮০ মিগ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ১২ মিগ্রা, ম্যাঙ্গানিজ .১২৫, ফসফরাস ৪৪, সিলেনিয়াম ০.৩ মাইক্রোগ্রাম, জিঙ্ক .৩২ মিগ্রা।

মিষ্টিকুমড়ার স্বাস্থ্যগুণঃ ভিটামিন ‘এ’ এর একটি সমৃদ্ধ উৎস হলো মিষ্টিকুমড়া। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনন্দিন স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য যে পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন হয়, তার ২৪৬% প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টিকুমড়ায় বিদ্যামন। মিষ্টিকুমড়াতে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন ‘এ’ (বিটা ক্যারোটিন), ‘সি’ ও ‘ই’ চোখের রেটিনার সুরক্ষা এবং বার্ধক্যজনিত রেটিনার ডিজেনারেটিভ চেঞ্জ রোধে অত্যন্ত কার্যকর। মিষ্টিকুমড়াতে বিদ্যমান উচ্চ ঘনত্বের পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি স্ট্রোক এবং বৃক্ক পাথুরির ঝুঁকি কমায়।

গর্ভধারণে সক্ষম মহিলাদের গর্ভধারণের সক্ষমতা বাড়ায় এবং দুগ্ধবতী মহিলাদের দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও মিষ্টিকুমড়া অনন্য। এছাড়া হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হাঁপানিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধেও রয়েছে মিষ্টিকুমড়ার জাদুকরী ভূমিকা।

মিষ্টিকুমড়া বীজ ও প্রোস্টেট গ্রন্থিঃ মিষ্টিকুমড়ার সমগ্র অংশ ব্যবহৃত হলেও ঔষধি গুণে সবচেয়ে সমৃদ্ধ অংশটি হলো এর বীজ। প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টিকুমড়া বীজে রয়েছে-কার্বোহাইড্রেট ৫৪ গ্রাম, প্রোটিন ১৯ গ্রাম, ফ্যাট ১৯ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার ১৮ গ্রাম, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে রয়েছে (প্রতি ৩২.৫ গ্রামে) নিউট্রিয়েন্ট পরিমাণ-ম্যাঙ্গানিজ ১.১৪ মিগ্রা, সোডিয়াম ৫.৮৫ মিগ্রা, পটাশিয়া ২৯৮.৬ মিগ্রা, ফসফরাস ৩৯৭.৬৪ মিগ্রা, কপার ০.৪৩ মিগ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ১৯০.৯২ মিগ্রা, জিঙ্ক ২.৫২ মিগ্রা, আয়রন ২৮৪ মিগ্রা। সাধারণত ৪০-৪৫ বছর বয়সের পর পুরুষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশক এস্ট্রোজেন হরমোন টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনটি ধীরে ধীরে ডাই-হাইড্রো টেস্টোস্টেরনে রূপান্তরিত হতে থাকে। এই ডাই-হাইড্রো টেস্টোস্টেরনের প্রতক্রিয়ার ফলে পুরুষের প্রোস্টেট গ্রন্থির কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং অস্বাভাবিকভাবে মাথার চুল পড়তে থাকে। প্রোস্টেট গ্রন্থির এই বৃদ্ধি সাধারণত নির্দোষ প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়; কখনো বা ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটিকে বলা হয় Benign Prostatic Hyperplasia (BPH)। বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি একটি অতি সাধারণ ঘটনা। চুল পড়ার এই রোগটিকে বলা হয় Androgenic or Male Pattern Alopacia, যাতে পুরুষের মাথার সামনের দুই পাশ থেকে চুল পড়ে ইংরেজি ‘M’ অক্ষরের আকৃতি ধারণ করে।

মিষ্টিকুমড়া বীজের তেলে রয়েছে বিটা-সিটোস্টেরল এবং ডেলটা ৭ স্টেরিন নামক দু’টি সক্রিয় উপাদান। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বিটা-সিটোস্টেরল নামক ফাইটোস্টেরলটি, ৫ আলফা রিডাকটেজ নামক এনজাইমের ক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে টেস্টোস্টেরন হরমোনটি ডাই-হাইড্রো টেস্টোস্টেরনে রূপান্তরিত হতে পারে না। মিষ্টিকুমড়া বীজের অপর সক্রিয় উপাদান ডেলটা-৭ স্টেরিন বা প্রোস্টেট গ্রন্থির গ্রাহক কোষে ডাই-হাইড্রো টেস্টোস্টেরনের ব্লকার বা প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। এতে করে দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকে। অতএব, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, নিয়মিত বীজ জাত তৈরি ওষুধ সেবনে পুরুষের প্রোস্টেট গ্রন্থির গঠন এবং কার্যকারিতা স্বাভাবিক ও সুনিয়ন্ত্রিত থাকে।

যারা মিষ্টিকুমড়া /বীজ খেতে পারবেন নাঃ যাদের মিষ্টিকুমড়ার প্রতি সংবেদনশীলতা আছে, যারা ডায়রিয়া, আমাশয়, পাতলা পায়খানা ও চুলকানী আক্রান্ত, যাদের হজমের দুর্বলতা আছে, যারা দীর্ঘদিন পেটের পীড়ায় ভুগছেন, যারা ক্রনিক কিডনি রোগে ভুগছেন, ক্রিটিনাইনের মাত্রা বেশি। ইবনে সিনা হেলথ্ ম্যাগাজিন, এপ্রিল ২০১৬।

No comments:

Post a Comment