এতে মগজ ভালো হবে। রুটি, দুধ, ভিটামিন বড়ি সব কিছুর মধ্যে ওমেগা-৩, ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে পাশ্চাত্যে। তবে পুষ্টি নামক হিমশৈলের অগ্রভাগে রয়েছে ওমেগা-৩, অনেক অনেক পুষ্টি উপকরণ রয়েছে; যা বুদ্ধিকে শাণিত করে। কেবল শৈশবে নয়, জীবনভর করে এ কাজ।
লসঅ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি ও ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক মৎস্যপ্রেমী ফার্মান্ডো গোমেজ পিনিল্লা মনে করেন, একজন ব্যক্তির খাদ্যে যথাযথ পরিবর্তন ঘটালে বুদ্ধিবৃত্তি উন্নত হয়, মগজ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়, বার্ধক্যের প্রভাব থেকেও রক্ষা পায়। ডা: গোমেজ পিনিল্লা মগজের ওপর খাদ্যের প্রভাব নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণা করেছেন এবং ইদানীং এ ব্যাপারে একটি পর্যালোচনা প্রকাশ করেছেন নেচার, রিভিউম নিউরো সায়েন্সে; যাতে মগজের ওপর খাদ্যের প্রভাব নিয়ে ১৬০টি গবেষণার বিশ্লেষণ রয়েছে।
তার ধারণা, কিছু কিছু খাদ্য ওষুধের মতো। এদের প্রভাব এতই প্রগাঢ় যে মানসিক স্বাস্থের জন্য এদের অবদান অনস্বীকার্য।
২০০৭ সালে প্রখ্যাত ব্রিটিশ জার্নাল ল্যানসেটে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট, যা মাঝে মধ্যে গর্ভবতী নারীরা গ্রহণ করেন। এই ভিটামিন গ্রহণ করলে ৫০-৭০ বছর বয়সী লোকের বার্ধ্যক্যজনিত বুদ্ধিবৃত্তির অধোগতি রোধ হয়।
তিন বছরব্যাপী পরিচালিত একটি গবেষণায় নেদারল্যান্ডসের ওয়াজিনেনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন দার্গা ও সহকর্মীরা দেখেছেন যারা এসব সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেছেন তারা স্মৃতিশক্তি, তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের দ্রুতি ও দ্রুত কথনের ব্যাপারে অনেক উন্নত ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। এছাড়া এমন প্রমাণ রয়েছে যে, ভিটামিন ফলেট ঘাটতি হলে বিষণ্নতা হতে পারে। এ জন্য পরামর্শ রয়েছে, প্রচুর পালংশাক খাবেন, কমলার রস-যাতে রয়েছে ফলিক এসিড। ডা: গোমেজ পিনিল্লার আরো পরামর্শ হলো, বেশি বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করুন। ধারণাটি অবশ্য নতুন নয়। বার্ধক্যের প্রভাব থেকে সুরক্ষার জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
যেমন ভিটামিন-ই, যা রয়েছে উদ্ভিজ তেল, বাদাম ও সবুজ পত্রবহুল সবজিতে। এটি গ্রহণ করলে স্মৃতিশক্তি উন্নত থাকে বলে ধারণা।
ডা: গোমেজ পিনিল্লা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নিয়ে বলেছেন অন্য কাহিনী। তার পর্যবেক্ষণ হলো মগজ সহজেই জারণজনিত ক্ষতির শিকার হয়। মগজ প্রচুর এনার্জি গ্রহণ করে এবং যে যে বিক্রিয়ায় এই এনার্জি উৎসারিত হয়, এর জন্য জারণ রাসায়নিক বেরিয়ে যায়।
বিভিন্ন ধরণের জাম ফলসমৃদ্ধ খাদ্যের গুরুত্ব তাই রয়েছে। এ ফলের রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব। এর অনেক উপকরণের মূল্যায়নই হয়নি। অন্যতম উপকরণ পলিফেনোল জারণ ক্ষতি রোধ করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
অন্য একটি পলিফেনোল ‘কারকুমিন-এর রয়েছে সুরক্ষা ক্ষমতা। হলুদে রয়েছে এই ‘কারকুমিন’। এই উপমহাদেশে হলুদ প্রচুর ব্যবহৃত হয় রন্ধনে। এ জন্যই আলজাইমার রোগ এ অঞ্চলে তত দেখা যায় না।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মগজের সুরক্ষা কিভাবে করে তা স্পষ্ট জানা যায়নি। ডা: গোমেজ পিনিল্লার মতে, সম্ভবত এটি সিনাপটিক মেমব্রেমকে রক্ষা করে। স্নায়ু কোষদের মধ্যে সংযোগস্থল হলো সিনাপস বা স্নায়ুসন্ধি, শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তির জন্য কেন্দ্রে রয়েছে এই স্নায়ুসন্ধি। তবে এটি মগজের সবচেয়ে নাজুক অংশও বটে।
মগজের কাজকর্মের সাথে সম্পর্কিত অনেক পুষ্টি উপকরণ স্নায়ুসন্ধিতে স্নায়ু সঙ্কেতের সম্প্রচারের সাথে জড়িত।
একটি ওমেগা-৩ মেদঅম্ল হলো DOCOSAHEXAENOIC ACID (DHA) স্নায়ুসন্ধিতে সঙ্কেত সম্প্রচারে সহায়তা করে, স্নায়ুসন্ধিকে দেয় নমনীয়তা; যা স্মৃতিশক্তির জন্য প্রোয়োজনীয়। স্নায়ুকোষ ঝিল্লির ৩০ শতাংশ চর্বি হলো ডিএইচএ অণু।
ওমেগা-৩ মেদঅম্লের হিতকরী প্রভাবের মধ্যে আছে শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তির উন্নতি, বিষণ্নতা ও অন্যান্য মানসিক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা।
ওমেগা-৩ রয়েছে তৈলাক্ত মাছ যেমন-স্যালমন মাছে, আখরোট। যেসব দেশে মানুষ প্রচুর মাছ খায় তাদের মধ্যে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন কম। এ জন্যই কি এত দুখের মধ্যেও মাছে-ভাতে বাঙালিরা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুখী মানুষ। এ ছাড়া জাপানের দ্বীপ ওকিনাওয়াতে মানুষের মধ্যে মানসিক বৈকল্য নেই বললেই চলে। এই দ্বীপের মানুষ প্রচুর মাছ খায় এমনকি মাছখেকো জাপানের লোকের চেয়েও বেশি। অথচ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব খাবারে ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি, যেমন ফাস্টফুড, ভাজা খাবার, মাখন, কেক, পেস্ট্রি এসব বেশি খেলে বুদ্ধিবৃত্তির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
সুস্থ মগজের জন্য চাই ভালো ও স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে একটি সতর্কবাণী রয়েছে-অতিভোজন নৈবচ।
এর ফলে মগজে পড়ে জারণজনিত চাপ আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেসব হিতকরী কাজ করবে এও তখন মিলিয়ে যাবে অতিভোজনে।
রাতের খাবারে ব্রেনফুড কি থাকতে পারে-এ নিয়ে পরামর্শ -
শুরু: পালংশাক, বিট, গাজর, শসা ও লেটুসের সালাদ, জলপাই তেল, আদা, রসুন।
এরপর: হলুদ, কাঁচামরিচ, জিরা, ফোড়ন দিয়ে মাছের ঝোল, তৈলাক্ত মাছ যেমন ইলিশ হলে ভালো। সাথে আলুভর্তা, ফুলকপি সেদ্ধ, এককাপ ভাত বা দুটো রুটি।
একটু মিষ্টান্ন: জাম, আঙুর, বাদাম দিয়ে মেশানো চকোলেট দুধ।
এরপর: গ্রিণ টি বা এক গ্লাস দুধ বা কমলার রস। এরপর নিদ্রা, কিছুক্ষণ পর। সূত্র: নয়াদিগন্ত, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩।
No comments:
Post a Comment