রক্তে কোলেস্টেরলের
মাত্রা ১৫০’র বেশি হলেই ধমনীর অভ্যন্তরীণ দেয়ালে তা জমতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে পুঞ্জীভূত
হয়ে প্লাক বা পিণ্ডের মতো হয়ে সেখানে লেগে থাকে। ফলে রক্ত প্রবাহের পথ সঙ্কীর্ণ হয়ে
বাধাগ্রস্ত হতে থাকে।
এভাবে রক্তনালী বিশেষ করে ধমনীর পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা হৃৎপিণ্ডে ঘটলেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঘটনাকে সিঁড়ির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৫০ থেকে যত উপরে উঠবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তত বেশি বাড়বে। কিন্তু কোলেস্টেরলের মাত্রার এই ঊর্ধ্বগতিকে রোধ করা সম্ভব বা কমিয়ে আনাও সম্ভব। এছাড়া শুধু টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা নিলেই চলবে না সেই সঙ্গে সার্বিক কোলেস্টেরল সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। তবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে হলে টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৫০’র নিচে রাখতে হবে।
এভাবে রক্তনালী বিশেষ করে ধমনীর পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা হৃৎপিণ্ডে ঘটলেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঘটনাকে সিঁড়ির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৫০ থেকে যত উপরে উঠবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তত বেশি বাড়বে। কিন্তু কোলেস্টেরলের মাত্রার এই ঊর্ধ্বগতিকে রোধ করা সম্ভব বা কমিয়ে আনাও সম্ভব। এছাড়া শুধু টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা নিলেই চলবে না সেই সঙ্গে সার্বিক কোলেস্টেরল সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। তবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে হলে টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৫০’র নিচে রাখতে হবে।
ভীতিকর কোলেস্টেরল
স্বাস্থ্য সচেতন
মানুষের কাছে কোলেস্টেরল একটি ভীতিকর উপাদান। বয়স চল্লিশের কোঠায় পৌঁছানোর পর রক্তের
কোলেস্টেরল মাত্রা জেনে নেয়া প্রয়োজন। কারণ কোলেস্টেরল নীরবে আপনার মৃত্যু ডেকে আনতে
পারে। মানুষের শরীরের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনাকারী দু’টি অঙ্গের অসুস্থতার জন্যই
কোলেস্টেলকে দায়ী করা যায়। হার্ট অ্যাটাক এবং মস্তিষ্কের স্ট্রোক এ দু’য়ের জন্য অনেক
সময়েই কোলেস্টেরলকে দোষারোপ করা হয়ে থাকে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়েই অনেকের
মাঝেই বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ কেউ রক্তে টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা ২০০ মি.গ্রা/ডিএল
থাকলেই সেটাকে নিরাপদ বলে মনে করেন। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। টোটাল কোলেস্টেরলের
মাত্রা ১৫০ মি.গ্রা/ডিএল বা তার নিচে হলে তাকে নিরাপদ মাত্রা বলা যায়। সাধারণ নিরাপদ
মাত্রার কোলেস্টেরল থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক দেখা যায় না। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে
কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৫০ থেকে ২০০ থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কোলেস্টেরলের
মাত্রা ৩০০’র চেয়ে দ্বিগুণ বেশি হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ১৬ বছর মেয়াদি আমেরিকার এক গবেষণায়
দেখা গেছে, যেসব লোকের কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৫০ থেকে ২০০’র মধ্যে তাদের প্রায় শতকরা
৩৫ ভাগ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই কোলেস্টেরল নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে এ
সম্পর্কে সচেতন হওয়াটাই হচ্ছে আসল কাজ। সেই সঙ্গে কোলেস্টেরল মাত্রা কমানোর ব্যবস্থাও
নিতে হবে।
ধরুন আপনি সুস্থ
আছেন কিন্তু কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৯৮ অথবা ১৮৯। কোলেস্টেরলের এই মাত্রা নিয়ে বিমর্ষ
হওয়ার কিছু নেই। দেখে নিন আপনার এইচডিএল (হাইনেসিটি লাইপোপ্রোটিন) বা ভালো কোলেস্টেরল
মাত্রা। তারপর হিসেব করে নিন টোটাল কোলেস্টেরল এবং এইচডিএলের। যদি এই অনুপাত ৪ এর নিচে
থাকে তবে আপনি রিলাক্স মুডে থাকতে পারেন। তখন সত্যিকার অর্থেই আপাতত হার্ট অ্যাটাকের
ঝুঁকি থেকে আপনি মুক্ত বলে ধরে নিতে পারেন। কাজেই টোটাল কোলেস্টেরল মাত্রা ২০০’র বেশি
হলেই যে তা ঝুঁকিপূর্ণ হবে এক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়। কারণ উচ্চমাত্রার এইচডিএল
(ভালো জাতের কোলেস্টেরল) হার্ট অ্যাটাকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কিন্তু কোলেস্টেরলের
মাত্রা ৩০০’র বেশি থাকাটা আসলেই খুব বেশি বলে ধরে নিতে হবে।
জেনে নিন আসল অবস্থা
কোলেস্টেরল মাত্রা
বারবার পরখ করতে অনীহা করবেন না। কারণ অধিকাংশ ডাক্তারই রক্তের লিপিড প্রোফাইল জেনে
নেয়ার উপদেশ দিয়ে থাকেন্ কিন্তু একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ঝুঁকিটা হৃৎপিণ্ড নিয়ে।
হৃৎপিণ্ড নিয়ে কতটুকু ঝুঁকি নেয়া উচিত হবে সে বিষয়টি অবশ্যই আপনাকে ভাবতে হবে। হৃৎপিণ্ডের
করোনারি আর্টারি বা ধমনীগুলো হচ্ছে বিপজ্জনক চরিত্রের। অসুস্থ করোনারি আর্টারি আপনার
কর্মচাঞ্চল্য কেড়ে নিবে। বঞ্চিত করবে আনন্দ থেকে। সবার কাছ থেকে অকালে আপনাকে সরিয়ে
নিয়ে যেতে পারে। কাজেই সন্দেহ দূর করে স্বস্তিতে জীবনযাপনের জন্য কোলেস্টেরলের সার্বিক
চিত্রটি জেনে নেয়া দরকার। শুধু কোলেস্টেরলের মাত্রা জানলেই চলবে না। সেই সঙ্গে জানতে
হবে এইচডিএল, এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এবং টোটাল কোলেস্টেরল ও এইচডিএলের
অনুপাত। বিশেষজ্ঞরা প্রথমবার কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখার ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয়বার কোলেস্টেরলের
মাত্রা দেখে থাকেন। যদি কারও কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে তাহলে প্রতি ৫ বছর
অন্তর কোলেস্টেরলের বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে হবে। আর কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে
একই পরীক্ষাগুলো ১ বছর অন্তর কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করানো উচিত।
চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি লোভ নয়
অবাক ব্যাপার
হচ্ছে পশুদের এথেরোস্ক্লেরোসিস কিংবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে শোনা যায় না। যদিও অনেক
পশু শুধু মাংস ভক্ষণ করেই বেঁচে থাকে। কিন্তু তারপরও পশুদের হার্ট অ্যাটাক জাতীয় রোগ
হয় না। কারণ পশুর স্বল্পদৈর্ঘ্যের খাদ্যনালীটি এমনভাবে ডিজাইন করা, যা শাকসবজি হজমের
জন্যই বেশি উপযোগী। যার ফলে পশুর শরীরে শোষিত কোলেস্টেরলের প্রায় পুরোটাই ভালো জাতের
কোলেস্টেরল এইচডিএল। কিন্তু মানুষের পরিপাকতন্ত্র সে তুলনায় অনেক দীর্ঘ বলে অতিরিক্ত
মাংস খাওয়ার পর খারাপ জাতের কোলেস্টেরল-এলডিএলই বেশি শোষিত হয়। কাজেই কোলেস্টেরলের
মাত্রা কমানোর মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে চাইলে পশুচর্বি বর্জন করতে হবে বিশেষভাবে।
এতে রক্তে খারাপ জাতের কোলেস্টেরল-এলডিএলের মাত্রা কমে যাবে। পাশাপাশি যদি শাকসবজি
খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া যায় সেক্ষেত্রে শাকসবজির এন্টি অক্সিডেন্ট রক্তনালীর ভেতরের
দেয়ালে খারাপ জাতের কোলেস্টেরল এলডিএলের আঁঠালোভাবে লেগে থাকার প্রবণতা হ্রাস করে।
চর্বি পরিহার এবং কোলেস্টেরল কমাতে ব্যায়াম
চর্বিযুক্ত খাবার
পরিহার এবং ব্যায়াম একসঙ্গে চালাতে হবে। কারণ চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চললে খারাপ জাতের
কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমে আর অন্যদিকে ব্যায়াম করলে ভালো জাতের কোলেস্টেরল এইচডিএলের
মাত্রা বাড়ে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ১ মি.গ্রা. এলডিএলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, একই পরিমাণ
এইচডিএলে তার চেয়ে তিনগুণ উপকার হয়।
কোলেস্টেরল বলতে
টোটাল কোলেস্টেরল, এইচডিএল (হাই নেসিটি লাইপোপ্রোটিন) বা ভালো কোলেস্টেরল এলডিএল’র
(লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) বা মন্দ কোলেস্টেরল এবং টিজি (ট্রাইগ্লিসারাইড) বোঝায়। সাধারণত
কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, মিষ্টি ও দুগ্ধজাত খাবার পরিহার অথবা কম খাওয়া, নিয়মিত
ব্যায়াম করলে সার্বিকভাবে রক্তের কোলেস্টেরল কমানো যায়। ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল হার্টের
রক্তনালীতে চর্বি জমতে বাধা দেয় এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। অন্যদিকে এলডিএল
বা মন্দ কোলেস্টেরল হার্টের রক্তনালীতে জমে হার্টে ব্লক সৃষ্টি করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক
হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভালো কোলেস্টেরল রক্তে নির্ধারিত মাত্রার
চেয়ে কম থাকে। এই অতি প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল বাড়ানোর তেমন কোনো ওষুধ নেই। তবে নিয়মিত
ব্যায়াম করলে রক্তের ভালো কোলেস্টেরল যেমন বাড়ে, তেমনি মন্দ বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের
পরিমাণ হ্রাস পায়। তাই রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন অন্তত
৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত।
বেশি খেলে বাড়ে মেদ
খাবার গ্রহণের
সময় যাতে বেশি খাওয়া না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাওয়ার সময় কোমরে বেল্ট পরার একটা
সুবিধা আছে। খাওয়া বেশি হয়ে গেলে বেল্ট টাইট হয়ে যাবে। সুতরাং বেল্ট টাইট হলেই খাওয়া
বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। তবে খাওয়া শেষে বেল্ট ঢিলে করে দেয়াই ভালো। ৪০ বছর বয়সের
পর থেকে মোটামুটিভাবে সবারই রেডমিট বা পশুর লাল মাংস খাওয়ার ব্যাপারে সংযত হওয়া উচিত।
আর যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে, বয়সটাও ৫০’র উপরে তাদের ক্ষেত্রে সতর্কতার মাত্রা আরেকটু
বেশি হবে। লাল মাংসের পাশাপাশি কলিজা এবং মগজ খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। দেখা গেছে
মুরগির কলিজায় খাসি-গরুর তুলনায় আড়াইগুণ বেশি কোলেস্টেরল থাকে। তুলনামূলক বিচারে সবচেয়ে
বেশি চর্বি রয়েছে খাসির মাংসে (প্রতি ১০০ গ্রাম খাসির মাংসে ৩.৬ গ্রাম চর্বি), তারপর
গরুর মাংসে (প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২.৬ গ্রাম) এবং মহিষে রয়েছে আরো কম পরিমাণ
চর্বি (প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষে ১.৯ গ্রাম চর্বি)।
কোলেস্টেরল বেশি মানেই শত্রুর সঙ্গে বসবাস
কোন নিমন্ত্রণ
মানেই চর্বিযুক্ত খাবারের বিপুল সমাহার। খাওয়ার পর এই চর্বি বাসা বাঁধে মানুষের রক্তে,
বেড়ে যায় রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা। কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকা মানেই রক্তে শত্রুর
সঙ্গে বসবাস। রক্তের বাড়তি কোলেস্টেরল হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিকে নির্জীব মৃতাবস্থায় নেয়ার
জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকে। আর এ কারণেই নিমন্ত্রণের ভোজনে কোলেস্টেরলের কথা মনে রাখতে
হবে, বিশেষ করে যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি কিংবা বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে।
উৎসব আনন্দের আতিশয্যে শত্রু কোলেস্টেরলের কথা যেন ভুলে না যান সেটাই স্মরণ করিয়ে দিতে
চেয়েছি এ লেখার মাধ্যমে। সুতরাং সুস্থ থাকার জন্য লাল মাংস গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন
করতে হবে এবং সেই সঙ্গে শাকসবজি গ্রহণেও হতে হবে সচেষ্ট। কেননা-খাওয়ার জন্য না বেঁচে,
বাঁচার জন্য খেতে হবে। দৈনিক আমারদেশ, ১৫ অক্টোবর, ২০১৩।
No comments:
Post a Comment